স্টাফ রিপোর্ট
আমলাতন্ত্রে দানা বেঁধেছে আতঙ্ক। কি বর্তমান! কি সাবেক! অস্বস্তি, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠার পারদ ক্রমাগত বাড়ছে। না জানি কি হয়! কে কখন কোন পরিস্থিতিতে আটক, গ্রেপ্তার হন।
ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন সাবেক তিন বাঘা মুখ্য সচিব। একাধিক সচিব। সাবেক আইজিপি, অতিরিক্ত আইজিপিসহ একাধিক আমলা। তালিকার পরবর্তী নামটি কার? তোফাজ্জল হোসেন মিয়া? সাবেক এই মুখ্য সচিব সহ অনেককেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খুঁজছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার আছেন একই তালিকায়। রউফ তালুকদারকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে আনলে হাজার হাজার কোটি টাকার ভুয়া ঋণ লোপাটের বিস্তারিত সব পাওয়া যাবে এমন বিশ্বাস করেন অন্তর্বর্তী সরকারের নীতিনির্ধারকদের অনেকেই।
সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব শফিউল আলম, খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, কবির বিন আনোয়ার কি তালিকায় আছেন? সাবেক ও বর্তমান আমলাদের একে অপরকে কাছে পেলেই এই প্রশ্ন করছেন? ২০১৪, ২০১৮ সালের অতি বিতর্কিত নির্বাচনে স্বরাষ্ট্র, আইন, নির্বাচন কমিশনের সচিব যারা ছিলেন তাদের কি কোনোভাবে গ্রেপ্তার এড়ানো সম্ভব হবে? কিংবা ২০২৪ এর ৭ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচন?
আমলা, পুলিশসহ বেসামরিক কর্মকর্তাদের কারা পুরোমাত্রায় রাজনৈতিক ক্ষেত্রবিশেষ অতিমাত্রায় রাজনৈতিক আচরণ করেছেন? বিরোধী মত দমন-পীড়ন করে একতরফা নির্বাচন করে সরকার গঠন করা যায়— শেখ হাসিনার এই চিন্তার সফল বাস্তবায়নের মূল কুশীলব আমলাতন্ত্র ও পুলিশে কারা? সেই তালিকা নিশ্চয়ই প্রস্তুত। এমনটাই বদ্ধমূল ধারণা প্রায় সব মহলের।
২০১৮ সালের রাতের ভোটের আইজিপি জাভেদ পাটোয়ারী এখন কোথায়? নিশ্চয়ই তিনিও বাদ যাবেন না। সাবেক সিনিয়র সচিব সাজ্জাদুল হাসান, আকতার হোসেন, আবু হেনা রহমাতুল মুনিম, আহমেদ কায়কাউস, মোস্তফা কামালউদ্দীন, আনোয়ার হোসেন, হেলালুদ্দীন আহমেদ, ফয়েজ আহমেদ, শহীদুল্লাহ খন্দকার, মুহীবুল হক, আব্দুল মালেক, কে এম আলী আজম, শহিদুজ্জামান, ইউসুফ হারুন, লোকমান হোসেন মিয়া, তপন কান্তি ঘোষ নিশ্চয়ই চরম উদ্বেগে দিন পার করছেন? সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক, সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান, ফজলে কবির, সাবেক দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদই বা কতটা স্বস্তিতে?
সাবেক-বর্তমান আমলাদের অনেকেই জানান সাবেক প্রভাবশালী কর্মকর্তারা তাদের কৃতকর্ম নিয়ে দুশ্চিন্তায়। সাবেক সচিব জিল্লার রহমান, ফরিদউদ্দীন চৌধুরী কোথায়? সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তাদের অনেকেই তাদের খুঁজছেন। সাবেক আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার? কিংবা যেসব কর্মকর্তা ২০২৪ সালের একতরফা সংসদ নির্বাচন পরিচালনায় তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ অফিসে বসেছিলেন? তারা কারা? তাদের তালিকা সালমান রহমান, গ্রেপ্তারকৃত সাবেক মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদ, কামাল নাসের চৌধুরীর কাছেই তো আছে। তারা কি একতরফা, বিতর্কিত, কারচুপির ও ভোট ডাকাতির নির্বাচনের দায় এড়াতে পারবেন?
যে আমলাতন্ত্র এতদিন শুধু রাজনীতিকদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে ফায়ার করতেন তাদের একাংশও এখন আইনের আওতায় আসছেন। এসব দেখে বর্তমান আমলারা নিশ্চয়ই ইতিবাচক শিক্ষা নেবেন। নিশ্চয়ই গড়ে উঠবে বৈষম্যহীন এক প্রশাসন-পুলিশ ব্যবস্থা। এমনটা কি আমরা আশা করতে পারি?
তবে বিগত হাসিনা সরকারের আমলে ডিসি-এসপি, বিভাগীয় কমিশনার ডিআইজিসহ যারা স্পর্শকাতর সরকারি পদে ছিলেন তাদের কপালের যে ভাঁজ বাড়ছে সেটা যেন অন্যরা ভুলে না যায়।