শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ।
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) সভাপতি ডা. জামাল উদ্দীন চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ দখলের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি তিনি দলবল নিয়ে রাজধানীর উত্তরার শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে যান। নিজেকে ট্রাস্টের সেক্রেটারি দাবি করে আয়-ব্যয়ের হিসাব দিতে নির্দেশ দেন। এমনকি তার জন্য মেডিকেল কলেজে একটি কক্ষ প্রস্তুত করতেও নির্দেশ দেন কলেজের অধ্যক্ষকে। এ বিষয়ে অপারগতা প্রকাশ করলে সভাপতি ও তার সঙ্গে থাকা বহিরাগতরা অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত করেন।
জানা গেছে, শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং নার্সিং ইনস্টিটিউট শহীদ মনসুর আলী ট্রাস্টের অধীনে পরিচালিত। ট্রাস্টের চেয়ারম্যান প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের পুত্র তমাল মনসুর এবং সেক্রেটারি তার ভাই এমপি তানভীর শাকিল জয়। প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯৫ সাল থেকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বিএমঅ্যান্ডডিসি এবং বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজ আইন ২০২২-এর বিধি অনুযায়ী পরিচালিত। গত ২৯ বছর সব ঠিকঠাক চললেও সেখানে গত ২৭ জুন এই নাটকীয় ঘটনা ঘটে।
বিভিন্ন অনুসন্ধান ও মেডিকেল কলেজের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ২৭ জুন দুপুরে স্বাচিপ সভাপতি ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী অর্ধশত বহিরাগত নিয়ে স্লোগান দিয়ে মেডিকেল কলেজে যান। তার মধ্য থেকে অন্তত ২৫ জনকে নিয়ে কলেজের অধ্যক্ষের কক্ষে প্রবেশ করেন। সেখানে তিনি নিজেকে ট্রাস্টের সেক্রেটারি দাবি করেন। অধ্যক্ষ বিষয়টি নিয়ে তাকে ট্রাস্টি বোর্ডের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। অবৈধভাবে দখলের এই চেষ্টা নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ গত ৩০ জুন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রীর কাছে প্রতিকার চেয়ে একটি অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন।
কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন সই করা অভিযোগপত্রে বলা হয়, গত ২৭ জুন দুপুরে স্বাচিপ সভাপতি ডা. মো. জামাল উদ্দিন চৌধুরী ৫০ জন বহিরাগতকে সঙ্গে নিয়ে স্লোগান দিয়ে কলেজটিতে প্রবেশ করেন। এরপর তার সঙ্গে আসা বহিরাগতদের মধ্য থেকে ২০ থেকে ২৫ জনকে নিয়ে কলেজের অধ্যক্ষের কক্ষে প্রবেশ করেন। সেখানে তিনি নিজেকে শহীদ মনসুর আলী ট্রাস্টের সেক্রেটারি দাবি করেন। ট্রাস্টের বিভিন্ন বিষয়ে অধ্যক্ষের কাছে জানতে চান। এরপর থেকে কলেজের সব বিষয়ে তার সঙ্গে পরামর্শ করতে নির্দেশ দেন।
এরপর স্বাচিপ সভাপতিকে তিনি জানান, ট্রাস্টের বর্তমান সেক্রেটারি এমপি তানভীর শাকিল জয়। এ-সংক্রান্ত যে কোনো বিষয়ে জানার থাকলে বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং সেক্রেটারির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে অনুরোধ জানাই। তখন স্বাচিপ সভাপতি বলেন, এখন থেকে তিনি নিয়মিত মেডিকেল কলেজে আসবেন। তার জন্য একটি কক্ষ প্রস্তুত করতে এবং তার সব আদেশ মেনে চলতে নির্দেশ দেন। ট্রাস্টি বোর্ডের অনুমোদন ছাড়া এই নির্দেশনা অধ্যক্ষের পালন করা সম্ভব নয় বলে অস্বীকৃতি জানালে স্বাচিপ সভাপতির সঙ্গে থাকা বহিরাগতরা অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত করেন।
বহিরাগতদের এমন কর্মকাণ্ডে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষা ও সেবা কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়েছে। জাতীয় চার নেতার অন্যতম ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর নামে তার পুত্র সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিম প্রতিষ্ঠিত মেডিকেল কলেজের সুনাম রক্ষার্থে বিষয়টি স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে দেখার জন্য অনুরোধ করা হয়।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে ট্রাস্টি বোর্ডের সেক্রেটারি ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের এমপি তানভীর শাকিল জয় কালবেলাকে বলেন, গত ২৭ জুন স্বাচিপ সভাপতি মেডিকেল কলেজে এসে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেছেন, যা অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অনভিপ্রেত। স্বাচিপ সভাপতি কলেজে দখল করতে এসেছেন—এমন কথা প্রথমে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়েছে। পরে খোঁজ নিয়ে সত্যতা পেয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে বিষয়টি অবহিত করি।
তবে পুরো বিষয়টি অস্বীকার করেছেন স্বাচিপ সভাপতি ডা. মো. জামাল উদ্দিন চৌধুরী। এ-সংক্রান্ত অডিও এবং ভিডিও রয়েছে জানালে তিনি বলেন, আমি গিয়েছিলাম; তবে এমন কোনো ঘটনার সত্যতা থাকলে তারা যেন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করে।