স্টাফ রিপোর্ট।
শেষ পর্যন্ত সুপার এইট থেকেই বিদায় নিয়ে দেশে ফিরছে টাইগাররা।
সুপার এইটে দুইটা হারের পরেও প্রায় পড়ে পাওয়া চৌদ্দ আনার মতো একটা সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। সেমিফাইনালের কোয়ালিফায়ারে পরিণত হওয়া খেলাটায় বিচলিত ও উত্তেজিত আফগানিস্তান মাত্র ১১৫ রানে গুটিয়ে যায়। বাংলাদেশকে সেমিফাইনালে যেতে জিততে হতো ১২.১ ওভারে।
পিচটা ব্যাটিং সহায়ক ছিল না তা সত্যি, কিন্তু পিচ যেমনই হোক এই ধরনের সুযোগ পেলে দুনিয়ার যে কোনো দলই একটা চেষ্টা নিতো। কারণ ১২.১ ওভারে জিততে না পারলে এমনিতেও টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় হতো। আশ্চর্যভাবে দেখা গেলো, বাংলাদেশ দল সেই চেষ্টাই করলো না। তাঁদের শরীরী ভাষাতেই কোনো চেষ্টা দেখা গেলো না।
বছরের পর বছর ক্রিকেট খেলেও, দুনিয়ার অন্যতম ধনী ক্রিকেট বোর্ড এবং বিশ কোটি লোকের বিপুল সমর্থন থাকলেও দলটার যে জেতার মতো মানসিকতাই গড়ে উঠেনি তার পেছনে আছে এই দেশের গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের অভাব।
কিছুদিন আগেই এক সাক্ষাৎকারে সাকিব আল হাসান বলেছিলেন, ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনি জান উজাড় করে খেলতেন। তিনি ভাবতেন খেলার ভালো-মন্দ আর দলের প্রতি ডেডিকেশন থাকাটাই আসল। কিন্তু, একবার বোর্ডের নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর তিনি টের পান এই দেশে শুধু খেলার পারফর্ম্যান্স বিষয় না। এখানে বোর্ডের কর্তাদের খুশী রাখতে হয়, নানারকম লিয়াজোঁ ঠিক রাখতে হয়, রাজনীতিটা বুঝতে হয়।
রাজনীতিটা খুব ভালো বুঝেছেন সাকিব। যে ধারায় তিনি ক্ষমতাসীন দলের লেজুড় ধরে সংসদ সদস্য হয়েছেন। তাঁর নামে শেয়ারবাজার, মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে বেতন না দেওয়া সহ নানারকম দুর্নীতির অভিযোগ। কিন্তু, খেলার মাঠে পারফর্ম্যান্স যাই থাক, সাকিব জানেন, এদেশে যেহেতু কোনো গণতন্ত্র নাই, এইখানে ম্যানেজ করাই আসল।
সাকিবের মতো আরেক সাবেক ক্যাপ্টেন মাশরাফি এর আগেই সে দলে নাম লিখিয়েছেন। একসময় গোটা দেশের ভালোবাসা পাওয়া মানুষটা দলের বোঝা হয়েও দলে খেলে গেছেন, দেশের মানুষের ভালোবাসার বদলে বিনা ভোটের এমপি হওয়াটাই বেছে নিয়েছেন।
এতো গেলো বাংলাদেশের অন্যতম সেরা দুই ক্রিকেটারের গল্প। বাকিদের কথা তো বলাই বাহুল্য। পারফর্ম্যান্সের চেয়ে কর্তাদের মন জোগানো আর তাঁদের গুটি হওয়াই দলে থাকা আর লাখ লাখ টাকা কামানোর উপায় এই ব্যাপারটা তাঁরা ধরে ফেলেছেন। এমনকি হাথুরুসিংহের মতো বিদেশি কোচও তা ধরে ফেলেছেন। বিদেশি কোচেরা যত ভালোই হোক, যারা ম্যানেজ করার খেলায় ব্যর্থ তাঁরা টিকতে পারেন না।
ক্রিকেট দিয়ে এই দেশের সার্বিক অবস্থা বোঝা যায়। দেশের স্কুল ক্রিকেটের অবস্থা তথৈবচ। ঘরোয়া লীগে কাউন্সিলর ভোট আর অন্যান্য সমীকরণে বেশিরভাগ খেলাই পাতানো হয়। একবার এক প্রতিবাদী ছেলে পাতানো খেলার প্রতিবাদে দ্বিতীয় বিভাগের এক খেলায় ৪ বলে ইচ্ছা করে ৯২ রান (ওয়াইড দিয়ে) বিশ্ববাসীর দৃষ্টি কেড়েছিলেন। অনেক হইচই হলেও কোনো পরিবর্তন হয়নি। কারণ ৯০০ কোটি টাকার এফডিআরসহ অগণিত ব্যবসা আর সামাজিক অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে বিপুল ব্যবসার ধান্দা করা বোর্ড কর্তারা খেলার মান বা উন্নয়ন নিয়ে একদমই চিন্তিত না। দেশের প্রায় সমস্ত সেক্টরেই এই হচ্ছে। আর্মির আজিজ, পুলিশের বেনজীর বা ট্যাক্সের মতিউরের মতো ক্রিকেট বোর্ডও একইভাবে চলছে।