স্টাফ রিপোর্ট।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের বিপুল সম্পদের খবর চাউর হওয়ার পর একজন ব্যক্তি সরকারি ওই বেতনে চাকরি করে কীভাবে এতো সম্পদ গড়ে তুলতে পারেন তা নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন উঠেছে।
এদিকে, অস্বাভাবিক সম্পদ অর্জনের ক্ষেত্রে বেনজীরের চেয়ে কম যাননি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার পদে তারই স্থলাভিষিক্ত হওয়া আছাদুজ্জামান মিয়া। তিনিও একইরকম সরকারি চাকরির ‘ঘোষিত’ আয়ের তুলনায় বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। বাংলা আউটলুকের অনুসন্ধানে এমনটাই দেখা গেছে।
এখন পর্যন্ত যেসব কাগজপত্র পাওয়া গেছে তাতে দেখা গেছে, স্ত্রী ও তিন সন্তানসহ আছাদুজ্জামানের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে ২৩৭ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের সম্পদ রয়েছে।
পরিবারের সদস্যদের নামে ছাড়াও শ্যালক, চাচাত ভাই ও গ্রামের বাড়ির বিশ্বস্ত তত্ত্বাবধায়কের নামেও সম্পত্তি কিনেছেন পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা আছাদুজ্জামান। আর তাদের নামে কেনা সম্পদের মোট মূল্য অন্তত ৬ কোটি টাকার বেশি।
বেনজীরের বিপুল সম্পদ ফিরিস্তি সামনে আসার পর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) জোর দিয়েছে যে, যখন তার মতো শক্তিশালী কর্মকর্তারা কোনো জবাবদিহি ছাড়াই তাদের পদের অপব্যবহার করেন, তখন তারা সমাজের জন্য অনিয়ন্ত্রিত হুমকি হয়ে ওঠেন এবং জনগণের প্রতি সরকারের দায়িত্বের বিষয়টি হারিয়ে যায়। দুর্নীতিবিরোধী এই ওয়াচডগ দুর্নীতিতে জড়িত সবার নাম প্রকাশ করে এবং তাদের জবাবদিহিতার আওতায় এনে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স প্রতিশ্রুতি’ প্রমাণের আহ্বান জানিয়েছে।
ডিএমপির ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদে কমিশনার আছাদুজ্জামান প্রায় পাঁচ বছর এ দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৯ সালে অবসর নেওয়ার পর তিনি আরও তিন বছর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অধীনে জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক সেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
আছাদুজ্জামান দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সময় ডিএমপি প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একটি হলো গুলশানের হলি আর্টিসান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলা। অন্যটি ২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচন, যা ব্যাপক কারচুপির অভিযোগে ‘মধ্যরাতের নির্বাচন’ হিসেবে পরিচিতি পায়।
সবচেয়ে ভালো অফিসারদের একজন হিসেবে আছাদুজ্জামান ২০১৭ ও ২০১৯ সালে দুইবার বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (সাহসী) এবং দুইবার রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (সাহসিকতা) পান।
আছাদুজ্জামান শুধু নিজের নামেই নয়, তার স্ত্রী আফরোজা জামান এবং তাদের তিন সন্তান আসিফ শাহাদাত, আয়েশা সিদ্দিকা এবং আসিফ মাহদিনের নামেও উল্লেখযোগ্য সম্পদ গড়েছেন।
বেনজীর যেমন স্ত্রীর নামে শত কোটি টাকার সম্পত্তি গড়েছেন, আছাদুজ্জামানও তার স্ত্রী আফরোজা জামানের নামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
নথিপত্র থেকে জানা যায়, আছাদুজ্জামানের স্ত্রী আফরোজা একজন গৃহিণী। তিনি চাকরি বা ব্যবসা করেন এমন কোনো ইতিহাস নেই। তারপরও তার নামে অন্তত ১১৩ কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে।