স্টাফ রিপোর্ট।
ক্ষমতাসীনদের চোখে এবারের বাজেট ‘গণমুখী’। তবে সমমনা ও বিরোধীদের কাছে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন, নানান আপত্তি। বৃহস্পতিবার (৬ জুন) বাজেট ঘোষণার পরেই নিজেদের প্রতিক্রিয়ায় বাজেটকে ব্যাখ্যা করেছেন দেশের রাজনৈতিক দলের নেতারা।
দেশের সংকটময় অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা হয় বৃহস্পতিবার বিকালে। তবে বাজেটের আকার ছোট নয়। ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেটটি প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। অর্থমন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর এটিই তার প্রথম বাজেট।
স্বাভাবিকভাবেই এবারের বাজেটেও বিভিন্ন জিনিসের দাম কমানোর ও বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। রাষ্ট্রের আয় বাড়াতে করের দিকেও দেওয়া হয়েছে বিশেষ নজর। তবুও থাকছে বড় ঘাটতি।
আওয়ামী লীগ মনে করে, এবারের বাজেটও অতীতের মতো গণমুখী হয়েছে। বাজেট প্রস্তাবের পর এক প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন, সংকটে গণমুখী বাজেট হয়েছে। দলের নির্বাচনী ইশতেহারে দেওয়া অঙ্গীকার ও অগ্রাধিকার খাত বিবেচনায় নিয়ে বাজেট দেওয়া হয়েছে।
তবে ক্ষমতাসীন দলের মুখপাত্রের বক্তব্যে একমত নন বিরোধীরা। প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘কল্পনার ফানুস’ বলে আখ্যায়িত করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান।
ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, একটি মৌলিক বিষয় হচ্ছে, আওয়ামী লীগ আজ অন্যায়ভাবে গায়ের জোরে সরকারের ক্ষমতা দখল করে আছে। কাজেই এদেশের ১৮ কোটি মানুষের আগামী বছরের ভাগ্য নির্ধারণে জনপ্রতিনিধিত্ববিহীন এই সরকারের কোনো নৈতিক অধিকার নেই এবং এটাই হচ্ছে আজকের দিনে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য।
এদিকে সমমনা দলের মধ্যেও বাজেট নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। দলটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন মনে করেন ‘আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফের শর্ত পূরণ করা ছাড়া এই বাজেট সরকার দিতে পারেনি।
এদিকে বাজেট প্রস্তাবের পর নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিএনপির সমমনা ১২ দলীয় জোট। জোট প্রধান ও জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, জোটের মুখপাত্র বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, জোটের সমন্বয়ক বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন ফারুক রহমান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন পারভেজ, ইসলামী ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আব্দুর রকিব ও বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির মহাসচিব আবুল কাশেম স্বাক্ষরিক এক বিবৃতিতে দাবি করা হয়, ‘এই বাজেট গরিবের পকেট কাটার’।
বিএনপি নেতা, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রাত্তন কেন্দ্রীয় নেতা, বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী, সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জননেতা মাহবুব চৌধুরী বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বলেন, বৈধতাবিহীন সরকারের বাজেট কখনোই জনকল্যাণকর হতে পারেনা। সরকারের তৈরী হাজারও বেনজির আজিজরা লুট করে খাচ্ছে। সরকার ও জনগন উভয়ই ঋন করে চলছে। আমরা দেখছি লাভের ব্যাক্তিকরন ও ক্ষতির রাস্ট্রীয়করন করা হচ্ছে।
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলেন, জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান সরকার পুনরায় ক্ষমতা দখল করেছে। ঋণনির্ভর বিশাল আকারের কল্পনা বিলাসী যে অবাস্তব বাজেট পেশ করেছে, তাতে দেশের জনগণের জন্য কল্যাণকর ও অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠার কোনো দিক নির্দেশনা নেই। প্রস্তাবিত বাজেটকে প্রত্যাখ্যান করেছে জামায়াত।