স্টাফ রিপোর্ট।
সবার মুখে অমর একুশের কালজয়ী গান‘ আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি।’ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে মাইকে সেই সুর ছড়িয়ে পড়ছিল দিকে দিকে। মানুষের এই শ্রদ্ধা বলে দিচ্ছিল, মাতৃভাষা আর দেশের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের টান অকৃত্রিম।
ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন সংগঠন আজ অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। বাঙালির ইতিহাসে একই সঙ্গে শোক আর গৌরবের দিন। ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভিড় করছে সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন সংগঠন।
বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাত ১২টা ১ মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতি ও পরে প্রধানমন্ত্রী শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
পরে মন্ত্রিসভার সদস্য ও দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা দলের পক্ষ থেকে শহীদ মিনারে আরেকটি পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন পুষ্পস্তবকঅর্পণ করে।
এরপর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু। এরপর প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের বিচারপতিরা শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন৷
পরে তিন বাহিনীর প্রধানেরা, পুলিশের মহাপরিদর্শক, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধারা শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সংগঠনের পক্ষ থেকে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শুরু করে। রাত থেকেই কালো ব্যানারে ছেয়ে যায় শহীদ মিনারের আশপাশের এলাকা। ভোরের আলো ফুটতেই ব্যানার নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পথে আসতে দেখা যায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের।
এ ছাড়াও অনেকে আসছেন পরিবার ও ছোট শিশুদের নিয়ে। অনেকের হাতে প্ল্যাকার্ড, মুখে ও হাতে লেখে রেখেছেন একুশের বিভিন্ন স্লোগান। যেখানে লেখা রয়েছে- ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’, ‘বাংলা ভাষা অমর হোক’, ‘বাংলা আমার মায়ের ভাষা’ ইত্যাদি।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর পর বেশির ভাগ লোকজন ঢুঁ মারছেন অমর একুশে বইমেলায়। ছুটির আমেজে অনেকে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, হাকিম চত্বর, কার্জন হল, মল চত্বর, ভিসি চত্বর। বেশির ভাগ মানুষের পরনেই সাদা-কালো পোশাক।
অমর একুশে ফেব্রুয়ারি আজ। বাঙালির ইতিহাসে একই সঙ্গে শোক আর গৌরবের দিন। ১৯৫২ সালের এই দিনে মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য বুকের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত করেছিলেন এ দেশের ছাত্র-তরুণরা। সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউর, অহিউল্লাহদের এই আত্মত্যাগ পৃথিবীর ইতিহাসে অনন্য উদাহরণ। এই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাকে তৎকালীন পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, ভাষার জন্য একটি জাতির অসাধারণ এই ভালোবাসাকে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থাও (ইউনেস্কো)। ১৯৯৯ সালে এই সংস্থাটি একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করে। এর পর থেকে বিশ্বের ১৮৮টি দেশে একযোগে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালিত হচ্ছে।